Probas Report
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

সুন্দরবনে বাঘের মুখোমুখি ২০ মিনিট যা করলাম

প্রবাস রিপোর্ট | অনলাইন ডেস্ক এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ০১:১৮ পিএম সুন্দরবনে বাঘের মুখোমুখি ২০ মিনিট যা করলাম

বছরখানেক আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটিতে (ডব্লিউসিএস) যোগ দিয়েছি। খুলনায় কর্মস্থল। বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে কর্মরত সদস্যদের বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণে তারা যেন সঠিকভাবে অবদান রাখতে পারে সে জন্য ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি।

 

এই কাজে প্রায়ই সুন্দরবনে যেতে হয়। ১১ এপ্রিলও মোংলা থেকে শরণখোলা রেঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করি। বরাবরের মতো এবারও সঙ্গে মাঝি আলমগীর ভাই।

 

সকালে যাত্রা করে শ্যালা নদী দিয়ে যখন হরিণটানা পৌঁছাই, তখন বিকেল। বনের মধ্যে দিনের আলো কমে এসেছে। ২৫০ ফুটের মতো চওড়া একটা খাল ধরে এগিয়ে চলেছে আমাদের নৌকা। এমন সময় ঝোপের মধ্যে একটা প্রাণীর নড়াচড়া লক্ষ করি। চকিতে দেখি, প্রাণীটা আর কিছু নয়, বাঘ।

 

রয়েল বেঙ্গলের চাহনি দেখার অভিজ্ঞতা খুম কম মানুষেরই হয়!

 

ততক্ষণে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেছে আমাদের নৌকা। ক্ষীণস্বরে মাঝিকে বলি, ‘ভাই, বাঘ দেখিছি বাঘ। নৌকা পিছিয়ে নেন।’

 

প্রতিবার বনে যাওয়ার সময় নৌকায় উঠেই আলমগীর ভাইকে আবদার করি, ‘ভাই, এবার কিন্তু বাঘ দেখাতে হবে!’ আমার কথা শুনে তিনি হাসেন। বাঘ দেখা নিয়ে নানা গল্প করেন। কিন্তু বাঘের আর দেখা মেলে না। কেন যেন এবার মোংলা থেকে আসার সময় কথাটা তাঁকে বলা হয়নি। আর এবারই...!

 

নৌকা পিছিয়ে আনতেই দেখি, একটা নয়, দুটি বাঘ। একটা ঝোপ থেকে মাথা বের করে আছে আরেকটা খানিকটা দূরে গোলপাতার নিচে দাঁড়িয়ে। তার মধ্যে একটা আমার দিকে একদৃষ্টে উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে। সম্ভবত আমাদের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সে।

 

 

তাদের দেখতে দেখতে ছবি তোলার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পরে মনে হলো, এবার ক্যামেরাই তো ব্যাগ থেকে বের করা হয়নি। তড়িঘড়ি ক্যামেরা বের করে লেন্স লাগাতে লাগাতেই মিনিটখানেক চলে যায়। এরপর টপাটপ ছবি তুলতে থাকি। এর মধ্যেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়। গোলপাতা, সুন্দরী আর গেওয়া গাছের প্রাকৃতিক বেষ্টনীতে নিজেদের সুনিপুণভাবে আড়াল করে রেখেছে যেন। সাধে কি আর তাদের ‘গোপন শিকারী’ বলে! একসঙ্গে আর ক্যামেরায় ধরা গেল না। একটার ছবি তুলতে গেল আরেকটা আড়ালে পড়ে যায়। বিকেল গড়িয়ে পড়ায় আলোও কমে গেছে। অগত্যা অল্প আলোতেই তাদের ছবি তুলি, ভিডিও করি।

 

এভাবে মিনিট বিশেক কেটে যায়। বাঘদের গতিবিধি দেখে মনে হলো, ওরা খাল পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা এসে বাগড়া দিয়েছি। ওদের তল্লাটে ঢুকে ওদেরই পথ আটকে আছি! আলমগীর ভাইকে বলতেই নৌকা চালু করেন।

 

ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। নৌকায় বসে উত্তেজনায় আমি কাঁপছি। অবিশ্বাস্য মুহূর্তটা কি আমার জীবনে সত্যিই ঘটেছে? ভাবতে ভাবতে ক্যামেরা হাতে নিয়ে একটু আগে তোলা ছবি আর ভিডিওগুলো দেখি। ছবি দেখার পর আর ভ্রম বলে মনে হয় না।

 

রাতে শরণখোলা রেঞ্জে স্মার্ট টিমের সঙ্গে যোগ দিই। ছবি দেখে তারাও খুশি। অনেকে দশকের বেশি সময় সুন্দরবনে কাজ করছেন। কিন্তু বাঘের সাক্ষাৎ পাননি। আবার কেউ কেউ আচমকা হয়তো দেখেছেন কিন্তু ছবি তোলার সুযোগ পাননি। তা নিয়েও আক্ষেপের শেষ নেই। বাঘ দেখা না–দেখা নিয়ে সবার আক্ষেপ শুনতে শুনতে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হলো।

Side banner