তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শুক্রবার বিরল এক আবহাওয়া দৃশ্য দেখা গেছে — ভারি তুষারপাতে ঢেকে যায় পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যাগ্নির সঙ্গে লড়াই করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রিজে শহর এবং আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাত হয়েছে, যা সাধারণত এই সময়ের জন্য একেবারেই অস্বাভাবিক।
রিজের একজন সাংবাদিক গেনচাগা কারাফাজলিওগ্লু বলেন, ‘রিজেতে আমরা আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্ত, মার্চ মাসে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়, কিন্তু জুলাই মাসে এতটা তুষারপাত আমি কখনো দেখিনি।
’ তিনি জানান, পুরনো প্রজন্মের কেউ কেউ ৩০-৪০ বছর আগে জুলাই মাসে হালকা তুষারপাত দেখেছেন, তবে এতটা কখনো হয়নি।
২ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ওভিত ইয়ায়লাসি মালভূমি বরফে ঢেকে যায়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা গেছে, আনজার ইয়ায়লাসি থেকে কাচকার মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্ক পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা বরফে আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ছিল আর্তভিন, যা ভেতরের দিকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এদিকে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে চলছে ভয়াবহ দাবানল। তুরস্কের বন ও পরিবেশমন্ত্রী ইব্রাহিম ইয়ুমাকলি জানিয়েছেন, শুক্রবার অন্তত ১০টি গুরুতর দাবানল বিরুদ্ধে লড়াই চলছে।
ইজমির প্রদেশে বৃহস্পতিবারের আগুনে দুইজনের মৃত্যু হয়। আগামী দিনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত এই আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের মুগলা এবং দক্ষিণের হাতায় এলাকায় প্রবল বাতাসের কারণে আগুনের ভয়াবহতা আরো বেড়ে গেছে। হাতায় সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কাছে অবস্থিত, সেখানে এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ‘জোর তৎপরতা’ চালানো হচ্ছে বলে জানান ইয়ুমাকলি।
গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে ৬২৪টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগই বিদ্যুতের তারের ত্রুটির কারণে সৃষ্ট বলে জানান তিনি। এদিকে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানান, আগুন লাগানোর অভিযোগে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বেশিরভাগই কৃষক ও শ্রমিক, যারা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় সৃষ্ট স্পার্ক থেকে আগুন লাগিয়ে ফেলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এই ধরনের চরম আবহাওয়া- একদিকে তুষারপাত, অন্যদিকে দাবানল- আরো ঘন ঘন ও তীব্র হচ্ছে।
সূত্র : এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :